স্বামী হত্যার মামলা করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়িছাড়া স্ত্রী

 


প্রবাস ফেরত স্বামী আকরাম হোসেন হত্যার বিচার চেয়ে পাঁচ মাস যাবত পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হতভাগ্য স্ত্রী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের রিমা আক্তার। স্বামী হত্যার মামলা করে আসামিদের হুমকিতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন স্ত্রী। তাদের হুমকিতে ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানান। 


শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান।


ভুক্তভোগী আকরাম হোসেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নলী পলাশ গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে। সংসারে সচ্ছলতা ফেরানের জন্য তিনি দীর্ঘদিন যাবত প্রবাস জীবনযাপন করেছেন। হত্যার প্রায় তিন বছর আগে তিনি গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ার নলী পলাশ গ্রামে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করছিলেন।

মামলার আসামিরা হলেন, পাশের বরুন গ্রামের সিরাজ উদ্দিন (৬৫), রাজু (৪৫) এবং ইসমাইল (৫৫), আজিজুল ইসলাম (৪০), রাজুর ছেলে শারিকুল (৩৫), ভবনেরচালা গ্রামের আতিকুল ইসলাম আতিক (৪৫), নলী পলাশ গ্রামের নূরুল ইসলাম (৫৪) এবং শৈলন্দ্র চন্দ্র মল্লিক (২৮)। তাদের মধ্যে আতিক, নূরুল ইসলাম এবং শৈলন্দ্র চন্দ্র মল্লিক স্বামীর বসত ভিটায় এসে আমাকেসহ ছেলে-মেয়েদেরকে খুন করার হুমকি দেয়।


রিমা আক্তার বলেন, ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর তার স্বামী রাত সাড়ে ৮টায় বাড়ির পাশে কিত্তনখোলা বিলে মাছ ধরার জন্য পাতানো জাল দেখতে যায়। রাত গভীর হলেও তিনি বাড়িতে না আসায় ভাসুর দেলোয়ার (৫০) এবং চাচা শ্বশুর সফিকুল সফি (৬৫) আমার স্বামীকে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করে পায়নি। পরদিন ১০ নভেম্বর সকাল ১০টায় খবর পাই আমার স্বামীর লাশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অবস্থায় বরুন বিলে ইসমাইলের খেতে পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামীর মরদেহ দেখতে পাই। তিনি দাবি করেন তার স্বামীর মৃত্যু রহস্যজনক। তার সঙ্গে পাশের বরুন গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, রাজু এবং ইসমাইলের জমিসংক্রান্ত মতবিরোধ ছিল। সিরাজ উদ্দিনের পরিকল্পনায় রাজু, ইসমাইল এবং তাদের সহযোগীরা আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। রাতের আঁধারে হত্যা করে লাশ জমিতে পুঁতে রাখে আসামীরা। মাদরাসা পড়ুয়া বড় মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করে-বাবার হত্যাকারীরা জনসম্মুখে এখনো কীভাবে ঘোরাফেরা করছে।


আসামিরা হুমকি দিচ্ছে আমার স্বামীর পথে আমাকেও যেতে হবে। তাদের অব্যাহত হুমকিতে আমি সন্তানদের নিয়ে ভয়ে আছি এবং তাদেরকে নিয়ে ছয় মাস যাবত স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা ভয়ে স্কুল, মাদরাসায় যেতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে। আসামিরা হুমকি দিয়েছিলেন দুই কোটি টাকা লাগলেও বাড়ি থেকে সরিয়ে দেবে এবং পায়ের নিচে মাটি রাখবে না। স্বামীর কষ্টার্জিত টাকায় কেনা জমি ও বাড়ি দখলের জন্য দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করে আসছিল। এর জেরেই আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বরুন বিলে ইসমাইলের খেতের চারপাশে জিআই তার স্থাপন করে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখে। খেতের পানিতে নামার পর রাতের আঁধারে আমার স্বামীকে তারা শরীরের সাত স্থানে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে লাশ জমিতেই পুঁতে রাখে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আমার স্বামীকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।


কাপাসিয়া থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে বাদীকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে তিনি গাজীপুর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।


আসামিদের মধ্যে নূরুল ইসলাম বলেন, আকরাম হোসেনের বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার সময় এক হাত ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য বলেছিলাম। সে জমিতে মাছ ধরার জন্য গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন বলেন, নিহত আকরাম হোসেনের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি চলমান রয়েছে। আসামিরা গাজীপুরের আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেওয়া হবে।


প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর বাড়ির পাশে কিত্তনখোলা বিলে মাছ ধরার জন্য পাতানো জাল দেখতে যায় আকরাম হোসেন। পরদিন সকাল ১০টায় বরুন বিলে ইসমাইলের খেতে পোঁতা অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post