থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এ নিয়ে আজ বিকেলে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন মোদি। পোস্টে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সাথে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা রোধের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’
প্রসঙ্গত, ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ দুপুরে ওই বৈঠকের পর এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভারতে বসে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, এসব বিষয় বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে হত্যা, তিস্তা নদীর পানি বন্টনসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে, এ বৈঠকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে তা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বৈঠক নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি (মোদি) জোর দিয়ে বলেন, ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করে। নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন, যা উভয় দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা দিয়েছে। এই চেতনায়, তিনি আবারও বাস্তবতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতের আকাঙ্ক্ষার ওপর জোর দেন।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আরও আহ্বান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে যেকোনো বক্তব্য এড়িয়ে চলাই ভালো। সীমান্তে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার প্রতিরোধ বিশেষ করে রাতে, সীমান্ত স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রয়োজন।’
বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নৃশংসতার সকল ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্যও জোর দিয়েছেন।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হলো।
বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন ২ এপ্রিল শুরু হয়ে আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ব্যাংককে শেষ হয়েছে। এতে পরবর্তী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
Post a Comment