সিলেটের পর চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেএফসি, বাটার শোরুমসহ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছে একদল জনতা। আজ সোমবার দুপুরের পর থেকে এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিন পালিত হয় ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি। গাজার প্রতি সহিংসতা জানিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থী ও জনতা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এই কর্মসূচির মধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলায় এ ভাঙচুর চালানো হয়।চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে সোমবার দুপুর থেকে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলবিরোধী কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জনতা। এসময় নগরীর বিভিন্ন স্থানে কেএফসি, পুমা’র শোরুমসহ কোকাকোলা ও সেভেন-আপের সাইনবোর্ড সম্বলিত দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের পাঁচলাইশ থানা শাখার উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল জিইসির দিকে রওয়ানা হয়। এতে হাজারেরও বেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মিছিলটি নাসিরাবাদ অতিক্রম করার পরই সানমার ওশান সিটি শপিংমল সংলগ্ন কেএফসি রেস্তোঁরার সামনে থেমে যায়। একপর্যায়ে মিছিল থেকে রেস্তোঁরাটির দিকে জুতা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে যায়।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলটি কেএফসির সামনে থেকে অগ্রসর হয়ে জিইসি মোড় ঘুরে দুই নম্বর গেইটের দিকে যায়। এরপর জিইসি মোড়ে হোটেল জামান সংলগ্ন পাঁচলাইশ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়ের উপরে থাকা কোকাকোলার সাইনবোর্ডে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় ওই ভবনের কাঁচও ভেঙে পড়ে যায়। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিলটি দুই নম্বর গেট অভিমুখে যাত্রা করে।
এছাড়া বিকেলে লালখান বাজার মোড়ে পুমা’র আউটলেটের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এসময় একই এলাকায় বীর চট্টলা রেস্টুরেন্টের সেভেন আপের লোগো সম্বলিত সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করা হয়।
এ ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। আমি নিজেও মাঠে আছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেখুলনা
খুলনা নগরীতে সন্ধ্যার দিকে কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও বাটার শোরুম ব্যাপক ভাঙচুর করে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা রেস্টুরেন্টের মালপত্র বাইরে ফেলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিকালে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ফেরিঘাট মোড়ের দিকে মিছিল বের হয় এবং মিছিলটি ফেরিঘাট মোড় ঘুরে আবার শিববাড়ি মোড়ে যায়। মিছিলের একটি অংশ যায় নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের দিকে। এরপর সন্ধ্যায় তারা কেএফসিতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বাইরে ফেলে দেয়।
ভাঙচুরকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ভাঙচুরের সময় কেএফসির পাশের ভবনে অবস্থিত বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কেএফসিতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের চেয়ার-টেবিল, ডেস্ক, ক্যাশ কাউন্টার, টিভি, ফ্রিজ সবকিছু একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কেএফসির সামনের সড়কেও কিছু আসবাবপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
কেএফসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এরপর কিছু একদল জনতা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে হোটেল টাইগার গার্ডেন ভবনের নিচতলায় বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালায়।
এ ব্যাপারে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেএফসি ও বাটার শোরুমে লোকজন ভাঙচুর চালিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিগাজীপুর
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজবাড়ী মাঠ এলাকায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তারা। এসময় ইসরায়েলের বিচারের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়।
দুপুর ৩টার দিকে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকা থেকে ‘সর্বস্তরের মুসলিম তাওহিদী জনতার’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে প্রতিবাদী নানা স্লোগান নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। মিছিল থেকে সব ধরনের ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পরে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ইসরায়েলি পণ্য বিক্রির অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালায়। এসময় তারা বাটা শোরুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে।
কক্সবাজার
দুপুরে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি হলিডে মোড় হয়ে কলাতলী গিয়ে শেষ হয়। এসময় হোটেল-মোটেল জোনের কেএফসি, পিৎজা হাট, কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এক দল জনতা।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘ইজরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে রেস্তোরাঁয় হামলা করা হয়েছে। এসময় ভাঙ্গা কাঁচ লেগে কয়েকজন পর্যটক আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে কিছু উশৃঙ্খল লোকজন যে ঘটনা ঘটিয়েছে এটা কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনের একই ভবনে কেএফসি ও পিৎজা হাট। হামলার কেএফসি খোলা থাকলেও বন্ধ রাখা হয়েছে পিৎজা হাট।
এদিকে সাইনবোর্ডে সেভেন আপের বিজ্ঞাপন থাকায় ভাঙচুর করা হয়েছে কাচা লংকা রেস্তোরাঁ। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে আমরা সমর্থন করি। আমাদের বললে আমরা সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতাম।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ এবং জেলা পুলিশের বক্তকুমিল্লা
সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ চলাকালে রাণীর বাজারে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর করেছে একদল জনতা। কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাহিনুর বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের সময় কেএফসির সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভাঙচুর চালায় একদল জনতা। রাণীর বাজার এলাকায় কেএফসি রেস্টুরেন্টে বাইরে থেকে অতর্কিত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পরে অন্তত ১০ জন উত্তেজিত যুবক রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ উপস্থিত হলে ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়।’
ওসি আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা মাগরিবের নামাজ আদায় করছিলেন। এরই সুযোগ নিয়েছে ভাঙচুরকারীরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএফসি রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী জানান, সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে বাইরে থেকে রেস্টুরেন্টের কাঁচের দেয়ালে ইট নিক্ষেপ করা হয়। এসময় রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকজন ক্রেতা খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে তারা ভয়ে দৌঁড়ে নেমে যান। পরে কয়েকজন যুবক ভেতরে ঢুকে চেয়ার ছুড়ে ভাঙচুর চালায়।
কুমিল্লায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন যুবক ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের স্লোগান দিয়ে কেএফসিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর করছে। ঘটনার পর কেএফসি রেস্টুরেন্ট পরিদর্শনে যায় পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন: অনুপম শীল (চট্টগ্রাম), এএইচএম শামিমুজ্জামান (খুলনা), আবুল হোসেন (গাজীপুর), তৌফিকুল ইসলাম লিপু (কক্সবাজার), তানভীর খন্দকার (কুমিল্লা)।ব্য পাওয়া যায়নি।তি শান্ত করে।’ রয়েছে।নেয়।
Post a Comment