ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের দাবির সত্যতা

 


বাংলাদেশ ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশকে ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। অন্য একটি দাবিতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ আগে এক্ষেত্রে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪০তম ছিল, ৮ মাসে পিছিয়ে এখন ৪৭তম হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই দুটো দাবিই ভুয়া।


মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ভ্যারিফায়েড পেইজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।


রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এই তালিকাটি আজই বা এ বছর প্রকাশ হয়নি। তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মূলত, জরিপের তথ্য ব্যবহার করে এই র‍্যাঙ্কিং প্রকাশিত হয়। এই র‍্যাঙ্কিংয়ের জরিপ হয়েছে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত।


অর্থাৎ, সর্বশেষ যে র‍্যাঙ্কিং ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটে রয়েছে তা বাংলাদেশের বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে হওয়া জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল।


রিউমর স্ক্যানার ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সময়ের আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সাইটটি প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে এবং এ সংক্রান্ত জরিপ হয় সে বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে।


যেমন, ২০২৩ সালেরটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ০৬ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ১৭ মার্চ থেকে ১২ জুন)। বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪০তম, ওভারঅল: ৬৯তম (মোট ৮৭ দেশের মধ্যে)।

একইভাবে, ২০২২ সালেরটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই)। বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪৪তম, ওভারঅল: ৭১তম (মোট ৮৫ দেশের মধ্যে)।


এসব তথ্য বিশ্লেষণ থেকে এটা নিশ্চিত যে, ২০২৫ সালের র‍্যাঙ্কিং এখনও প্রকাশ করেনি ইউএস নিউজ। রেওয়াজ অনুযায়ী তা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে।


দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১২৩তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে বলে বলা হলেও ওয়েবসাইটটির আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, বাংলাদেশ এই র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ২০২২ সালে। ওই বছর থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে র‍্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে: ২০২২ সালে ৮৫টি, ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি। এ পর্যন্ত কোনো বছরেই র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ফলে বাংলাদেশের কখনো ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবি বাস্তবসম্মত নয়।


২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের এই র‍্যাঙ্কিং নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটও জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি Asian SEA Story নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ইউএস নিউজকে সূত্র দেখিয়ে শিরোনামে ২০২৫ সালের র‍্যাঙ্কিং দাবি করে এ সংক্রান্ত প্রথম পোস্টটি করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়। এরপর Global Statistics নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৬ এপ্রিল রাতে একই পোস্ট করার পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে। অর্থাৎ, অন্তবর্তী সরকারের ৮ মাসে ৪৭তম হওয়া কিংবা ৮ মাসে ৭ ধাপ পিছিয়ে ৪৭তম হওয়া সংক্রান্ত দুটি দাবিই ভুয়া।


Post a Comment

Previous Post Next Post