সন্তানদের হত্যার পর আমাকেও খুনের হুমকি দিচ্ছে’

 


ওসি জানান, মাধবপুর এলাকায় রেললাইনে তিন যুবকের কাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। ধারণা করা হচ্ছে, ভোরের দিকে তারা যে কোনো ট্রেনের নিচে পড়ে নিহত হন।


এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লাকসাম থেকে জিআরপি পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেস্বামী নাই, সন্তানরা নাই। সব শ্যাষ হয়া গেছে। দুই সন্তানকে হত্যা করেও খুনিরা খ্যান্ত হয় নাই। মামলা তুলে নিতে খুনিরা এখন আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। সন্তানদের চোখের সামনে খুন হতে দেখেছি। খুনিদের বিচার চাওয়া কি অন্যায়? আমি কি হত্যাকারীদের বিচার দেখে মরতে পারব না?’ সন্তান হারিয়ে ক্ষোভ নিয়ে এসব কথা বলছিলেন মা সুফিয়া বেগম (৬০)।মাদারীপুরে মসজিদের ভেতরে ঢুকে চারজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার বাদী সুফিয়া বেগম। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে সুফিয়া বেগম দুই সন্তানসহ চার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে অংশ নেন নিহত চারজনের স্বজন ও এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তারের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করে স্মারকলিপি দেন তাঁরা।পূর্ববিরোধ ও বালু ব্যবসার জেরে গত ৮ মার্চ তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- দুই ভাই আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০), তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৭)। আতাউর ও সাইফুল সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে ও পলাশ একই এলাকার মুজাম সরদারের ছেলে। নিহত সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অলিল সরদার (৪০) ও তাজেল হাওলাদার (২০)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাজেল। আতাউর ও সাইফুলের প্রতিবেশী ছিলেন তাজেল। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অলিল সরদার এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মসজিদের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অস্ত্রধারী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করা দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এই ঘটনার পরে আসামিরা আরও প্রভাব বিস্তার করছে। মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষের লোকজন বাদী ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। আসামিদের ধরার ব্যাপারেও পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। পুলিশের ভূমিকা আসামিপক্ষে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা। এ সময় হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার দাবি জানান তাঁরা। মামলার বাদী সুফিয়া বেগমের তিন ছেলের ওপর হামলা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে তাঁর দুই ছেলে নিহত হন। বেঁচে যান বড় ছেলে অলিল সরদার।হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া অলিল সরদার বলেন, ‘আমি যে এখনো বেঁচে আছি, কখনও কখনও সেটা বিশ্বাস হয় না। ওরা আমাকে যেভাবে কুপিয়েছে, আমার শরীরে মাথায় যে পরিমাণ কোপের আঘাত রয়েছে, তাতে আমার বাঁচার কথা না। আল্লায় শুধু বাঁচাইছে। আমার আপন দুই ভাই ও চাচাতো দুই ভাইকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছি। হত্যাকারীদের দেখেছি। তাই ওরা আমাকেও খুন করতে হুমকি দিচ্ছে। আমার মাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে।’বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হোসেন সরদার, শাহজাহান খানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাদীকে হুমকির ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। তাঁরা অভিযোগ জানালে বাদীকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।’


মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার খোয়াজপুরের কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এ নিয়ে প্রতিবেশী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা যুব দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. শাহজাহান খান ও বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এর জের ধরে গত ৮ মার্চ শাহজাহান খান ও হোসেন সরদারের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন সাইফুল ও তাঁর ভাইদের কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার এক দিন পরেই সাইফুল ও আতাউর সরদারের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post