জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ শনিবার দিনব্যাপী আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং ক্ষমতা কাঠামোয় কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা।
আলোচিত প্রস্তাবিত সংস্কারের তালিকায় রয়েছে- দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ – ৪ বছর, সাংবিধানিক নিয়োগ হবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল ও উচ্চকক্ষের মতামত অনুযায়ী, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা; উচ্চকক্ষ হবে আনুপাতিক ভোটে নির্বাচিত, ১০০ নারী সংসদ সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে (ইলেক্টরাল কলেজ), সংবিধান সংশোধনে দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন ও গণভোট বাধ্যতামূলক, আইনসভার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থাকবে বিরোধী দলের সদস্যদের হাতে, সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে, বিচার বিভাগে সংস্কার ও রাজনীতিকরণ রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, ‘অধস্তন আদালত’ শব্দ পরিবর্তে ‘স্থানীয় আদালত’ ব্যবহারের প্রস্তাব, ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতি ও দলীয় আদর্শ বাদ দেওয়া, সব জাতি ও নৃগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা, নিরঙ্কুশ মৌলিক অধিকার এবং আদালতের মাধ্যমে তা বলবৎযোগ্য করা, ভোটের বয়স ১৬ এবং প্রার্থীর বয়স ২৩ নির্ধারণ, ডেপুটি স্পিকারের একজন বিরোধীদলীয় হওয়া বাধ্যতামূলক, প্রধানমন্ত্রী ও দলপ্রধান আলাদা ব্যক্তি হতে হবে, সরকার হবে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত, প্রধানমন্ত্রী শাসিত নয়, সংসদ সদস্যদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতার ভারসাম্য, আসন পুনর্বিন্যাস হবে স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে, নির্বাচনকালীন সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, উচ্চকক্ষে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ২৫% এবং নির্দলীয়দের জন্য ৩৩% আসন বরাদ্দ, ন্যায়পালের মাধ্যমে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের তদারকি, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় নির্বাচন, জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকার রহিত না করা, প্রার্থিতার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত না থাকা, উচ্চকক্ষে প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৩ বছর, ন্যায়পাল নিয়োগ বাধ্যতামূলক, সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পত্তির বিবরণ জনসম্মুখে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা।
এনসিপি জানায়, সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন অপরিহার্য। অন্যান্য সংস্কারগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে পারে।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে জানায়, ক্ষমতা কাঠামোয় ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো সংস্কারই মৌলিক নয়। বর্তমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে তারা যে সংস্কারকে মৌলিক মনে করে সেটা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলা হয়।
বৈঠকে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়, যার নেতৃত্ব দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য
Post a Comment