ফেসবুক লাইভ ভিডিও’র মেয়াদ এখন ৩০ দিন, কিসের ইঙ্গিত?

 ফেসবুক লাইভ ভিডিও’র মেয়াদ এখন ৩০ দিন, কিসের ইঙ্গিত?

ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করেন এমন ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক আপডেট নিয়ে এসেছে মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা। সম্প্রতি মেটা তাঁদের লাইভ ভিডিও সংরক্ষণ নীতিমালায় (ভিডিও স্টোরেজ পলিসি’তে) বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি হচ্ছে, এখন থেকে ফেসবুক লাইভ ভিডিও ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে মেটার লাইভ ভিডিও সার্ভারে। অর্থাৎ, ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করার ৩০ দিন পর ভিডিওটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যাবে এবং একবার ডিলিট হয়ে গেলে ব্যবহারকারী ভিডিও’টি আর অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। মেটার নতুন আপডেট কী বলছে?

মেটা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক লাইভ ভিডিও স্টোরেজ পলিসি’র নতুন আপডেটটি প্রকাশ করে। নিজেদের ব্লগে প্রকাশিত পোস্টে মেটা জানায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করা প্রতিটি ভিডিও ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে তাঁদের সার্ভারে। এরপর ভিডিওগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হবে বা এগুলো ডিলিট হয়ে যাবে। এর অর্থ হচ্ছে, ফেসবুকে একটি ভিডিও লাইভস্ট্রিম হওয়ার পর ব্যবহারকারী ৩০ দিন পর্যন্ত একে রিপ্লে করতে পারবেন, ফেসবুক প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে শেয়ার করতে পারবেন, এবং সর্বোপরি ভিডিওটি ডাউনলোড করে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। তবে ৩০ দিন পর তিনি আর ভিডিওটি অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। উল্লেখ্য, এর আগে লাইভ ভিডিওগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য সংরক্ষিত থাকত ফেসবুকে। লাইভ ভিডিও স্টোরেজ সম্পর্কিত নতুন এই আপডেট প্রসঙ্গে মেটা বলছে, ‘যেহেতু বেশিরভাগ লাইভ ভিডিও দেখা (ভিউ) হয় সম্প্রচারের (ভিডিও ব্রডকাস্টের) প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, তাই আমরা ফেসবুকে লাইভ ভিডিও সংরক্ষণের সময়সীমা আপডেট করছি। ১৯শে ফেব্রুয়ারী থেকে নতুন সম্প্রচারিত যেকোনো লাইভ ভিডিও আপনার ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইল থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত রিপ্লে, ডাউনলোড বা শেয়ার করা যাবে। এরপর ভিডিওগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হবে…’ 

কেন এই পরিবর্তন?
ফেসবুকের লাইভ ভিডিও স্টোরেজ নীতিমালায় এমন পরিবর্তনে পেছনে মূল কারণ হিসেবে মেটা বলছে, তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, লাইভ ভিডিওগুলোর বেশিরভাগই ব্রডকাস্ট হওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহই দর্শক আকর্ষণ করে থাকে। এক মাসের বেশি পুরোনো লাইভস্ট্রিম সাধারণত খুব বেশি দর্শক দেখে না। ফলে মেটা চাইছে লাইভ ভিডিওগুলো তাঁদের সার্ভারে ৩০ দিন পর্যন্ত রেখে এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগুলো ডিলিট ক

লাইভ ভিডিও ডিলিট করার প্রক্রিয়াটি কেমন হবে?
মেটা বলেছে যে, আগামী কয়েক মাসে ধাপে ধাপে ফেসবুকের লাইভ ভিডিওগুলো ডিলিট করা হবে। তবে পুরোনো লাইভ ভিডিও ডিলিট করার আগে সেগুলো ডাউনলোড করে রাখার সুযোগ দেওয়া হবে ব্যবহারকারীদেরকে। লাইভ ভিডিও ডাউলোড করার নতুন টুল নিয়ে আসার কথাও জানিয়েছে তাঁরা। ভিডিও ডিলিটের ক্ষেত্রে অবশ্য সুনির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে।

মেটা জানাচ্ছে যে, নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজে লাইভ ভিডিও রয়েছে এমন ব্যবহারকারীরা ভিডিও ডিলিট হওয়ার পূর্বে একটি নোটিফিকেশন পাবেন। উক্ত নোটিফিকেশন প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে ব্যবহারকারী চাইলে ডিলিট হতে যাওয়া লাইভ ভিডিও কনটেন্টটি ডাউনলোড করে রাখার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে একটি একটি করে ভিডিও ডাউনলোডের পাশাপাশি একসাথে একাধিক ভিডিও ডাউনলোডের-ও সুযোগ থাকবে।

এছাড়া ব্যবহারকারীর যদি অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ৬ মাসের জন্য লাইভ ভিডিও ডিলিট করার বিষয়টি স্থগিত রাখার বিকল্প সুযোগও রয়েছে। 

লাইভ ভিডিও-কে রিলসে রুপান্তরের সুযোগ
লাইভ ব্রডকাস্ট হওয়া ভিডিওগুলোকে সংরক্ষণের আরেকটি উপায় হচ্ছে এগুলোকে রিলসে রুপান্তর করা। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী চাইলে ফেসবুকের পুরোনো লাইভ ভিডিওগুলোকে একাধিক রিলস ক্লিপে রুপান্তর করে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে লাইভ ভিডিও ডিলিট হয়ে গেলেও রিলসে সংরক্ষিত থাকবে ভিডিওগুলো।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, ফেসবুকের লাইভস্ট্রিম ভিডিও’র জন্য ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিলেও ভিডিওগুলো দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করার একাধিক অপশন খোলা রেখেছে মেটা। ব্যবহারকারীরা একদিকে লাইভ ভিডিওগুলো ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারেন, চাইলে অতিরিক্ত সময়ও নিতে পারেন। ডাউনলোডের সুবিধার্থে পাচ্ছেন নতুন টুলও। অন্যদিকে তাঁরা লাইভ ভিডিওগুলোকে ছোট ছোট রিলস ভিডিও’তে রুপান্তর করেও ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। 

ফেসবুক লাইভ ভিডিও স্টোরেজ নীতিমালায় পরিবর্তন কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ফেসবুকের লাইভ ভিডিও ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের নতুন যে সিদ্ধান্ত মেটা নিয়েছে সেটা কতটা গ্রাহকপ্রিয় হবে তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু মেটার এই সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলুন ইঙ্গিতগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

১। রিলসকে প্রাধান্য দেওয়া: বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে শর্ট ভিডিও’র (স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও’র) জয়জয়কার। ব্যবহারকারীদের এই প্রবণতার কথা মাথায় রেখেই মেটা চাইছে ফেসবুকের লাইভ ভিডিওগুলো থেকে বেশি বেশি রিলস ক্লিপ তৈরি হোক। এক্ষেত্রে মেটার উদ্দেশ্য দুটো। 

প্রথমত, মেটা বুঝতে পেরেছে যে, সম্প্রচারের এক মাস পর বেশিরভাগ লাইভ ভিডিও খুব বেশি ‘ভিউ’ জেনারেট করতে পারে না, অথচ লাইভ সার্ভারের অনেকটা জায়গা দখল করে রাখে কার্যত ‘মূল্যহীন’ এই ভিডিওগুলো। উপরন্তু, লাইভস্ট্রিম ভিডিওগুলো সাধারণত আকারে বড় হয়ে থাকে, ফলে এগুলো সংরক্ষণের খরচও তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই ৩০ দিনের পুরোনো লাইভ ভিডিও ডিলিট করার মাধ্যমে সার্ভারের জায়গা ও খরচ দুটোই সাশ্রয় করতে চাইছে মেটা।

দ্বিতীয়ত, মেটা এও বুঝতে পেরেছে যে, বেশিরভাগ লাইভস্ট্রিম ভিডিও সামসময়িক ঘটনা নিয়েই হয়ে থাকে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এগুলোর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা হোস্ট ও দর্শক উভয়ের কাছেই হ্রাস পায়। এই প্রেক্ষাপটে লাইভ ভিডিওগুলো ডিলিট হয়ে গেলেও তাতে খুব বেশি ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না কারো। কিন্তু ডিলিট হতে যাওয়া ভিডিওটি বা এর কোনো অংশের যদি দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্ব থাকে ব্যবহারকারীর কাছে সেক্ষেত্রে রিলসের মাধ্যমে সংরক্ষণের সুযোগ আছে। 

এতে করে লাইভ ভিডিও’র গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো রিলস আকারে ফেসবুকেই থেকে যাবে। এভাবে মেটা পাবে নতুন রিলস কনটেন্ট, আর ব্যবহারকারী পাবে বিনামূল্যে লাইভের প্রয়োজনীয় অংশগুলো সংরক্ষণের সুযোগ। কী চমৎকার বিনিময়, তাই না!

২। ব্যয় সংকোচন: মেটা চলতি বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি খাতে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা চাইবে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করতে। লম্বা দৈর্ঘ্যের লাইভ ভিডিওগুলো ৩০ দিন পর ডিলিট করার মাধ্যেম একদিকে যেমন লাইভ সার্ভারের উপর চাপ কমে আসবে, নতুন স্পেস জেনারেট হবে অন্যদিকে খরচও কমে আসবে উল্লেখযোগ্যহারে।

৩। রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা:বিদ্যমান রিসোর্স বা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে মেটার নতুন এই সিদ্ধান্তে। এতদিন লাইভ ভিডিও অনির্দিষ্টকালের জন্য সংরক্ষণ করার কারণে মেটার সার্ভারের বিশাল এক অংশজুড়ে থাকত তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ লাইভ ভিডিও কনটেন্টগুলো। এবারে নতুন আপডেটের কল্যাণে মেটা তাঁদের সার্ভারের স্পেস লম্বা দৈর্ঘ্যের লাইভ ভিডিও’র পরিবর্তে স্বল্পদৈর্ঘ্যের রিলস ভিডিও সংরক্ষণে কাজে লাগাতে পারবে।   

তথ্যসূত্র: মেটা, সোশ্যাল মিডিয়া টুডে

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post