ভারত বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে, এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না

 ভারত বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে, এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না


আলোচনাটা ভবিষ্যতমুখী। এখনো গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনালে ওঠাই নিশ্চিত হয়নি সাউথ আফ্রিকার। ভারত সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেললেও তাদের সঙ্গেই সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার ম্যাচ পড়বে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর কেবল আগামী রোববার ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পরই পাওয়া যাবে। ফাইনালটা দুবাইয়ে হবে নাকি লাহোরে, সেটা নির্ভর করবে ভারত ফাইনালে উঠবে কি না তার ওপর। সে ক্ষেত্রে সেমিফাইনালে দেখা না হলেও ভারতের সঙ্গে ফাইনালে সাউথ আফ্রিকার দেখা হবে কি না, সে তো অনেক ‘যদি-কিন্তু’র ওপর নির্ভরশীল।

তবু ভারতকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন গেল সাউথ আফ্রিকার র‍্যাসি ফন ডার ডুসেনের দিকে। প্রশ্নটা ভারত তাদের সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলার কারণে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে কি না, এ নিয়ে। ফন ডার ডুসেন সরাসরিই বলে দিলেন, ভারত যে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। পাকিস্তানে নিরাপত্তাশঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে ভারত তাদের দল সেখানে পাঠাতে রাজি হয়নি, আবার ভারতের বড় দলকে বাদ দিয়ে তো আইসিসি এত বড় একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে না। বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী বলে কথা! সে কারণে ভারতের সব ম্যাচ দুবাইয়ে রেখে, ভারত ফাইনালে উঠলে সেটিও দুবাইয়ে রেখে (ভারত না উঠলে ফাইনাল হবে লাহোরে) আইসিসি পাকিস্তানের আয়োজনে চলতে থাকা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করল ‘হাইব্রিড মডেলে।’ সে সব পুরোনো খবর। নতুন করে ভারতের বাড়তি সুবিধার আলোচনা হচ্ছে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত কোচ আকিব জাভেদের মন্তব্যের রেশ ধরে।

গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণের পর আকিব জাভেদ একটু নাটুকে ঢংয়ে বলিনি বলিনি করেও ভারতের সুবিধার কথাটা বলেছিলেন এভাবে, ‘দেখুন, ওরা (ভারত) দুবাইয়ে থাকার পেছনে একটা কারণ আছে। …অবশ্যই আপনি যখন সব ম্যাচ একই মাঠে বা পিচে খেলবেন, আপনি বাড়তি সুবিধা পাবেন। (হেসে) ওরা একই হোটেলে থাকার বা একই পিচে খেলার সুবিধা পাচ্ছে বলে আমরা হেরেছি, এমন নয়। শুধু পিচের কারণে হয়নি এটা, ওরা এখানে গোটা দশেক ম্যাচ খেলছে বলেও নয়।’ এরপর অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে না থাকা প্যাট কামিন্সও এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। ইয়াহু স্পোর্টস অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত অধিনায়ক বলেছেন, ‘টুর্নামেন্টটা (এভাবে হাইব্রিড মডেলে হলেও) যে হচ্ছে, এটা ভালো দিক, তবে অবশ্যই এতে ভারত একই মাঠে খেলে যাওয়ার সুবিধা পাচ্ছে। ওরা এমনিতেই শক্তিশালী দল, এর ওপর ওরা নিজেদের সব ম্যাচ এখানে খেলার সুবিধা পাচ্ছে।’

এ নিয়েই করাচিতে আজ প্রশ্ন হলো র‍্যাসি ফন ডার ডুসেনকে। সাউথ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানও কথা বলেছেন কামিন্স-আকিভ জাভেদের সুরে, ‘অবশ্যই এটা একটা বাড়তি সুবিধা। পাকিস্তানকে এ নিয়ে কথা বলতে দেখলাম, তবে এটা তো সুবিধাই। আপনি যদি একই জায়গায় থাকেন, একই হোটেলে, প্র্যাকটিসে একইরকম সুবিধা পান, একই স্টেডিয়ামে খেলেন, প্রতিবার একই পিচে…সেটা অবশ্যই বাড়তি সুবিধা। আমার মনে হয় এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না।’

তবে একই জায়গায় খেলায় ভারতের জন্য বাড়তি চাপও আছে বলে মনে করেন ফন ডার ডুসেন, ‘এই সুবিধাটা কীভাবে কাজে লাগাবে, সেই দায়ও ওদের ওপরই পড়বে। একদিক থেকে দেখলে এটা ওদের ওপর বাড়তি চাপও তৈরি করে। কারণ যারাই সেমিফাইনালে বা সম্ভাব্য ফাইনালে ওদের সঙ্গে খেলবে, সেই দলের জন্য সেখানকার কন্ডিশন অচেনা। কিন্তু ভারত তো এই কন্ডিশনে অভ্যস্থ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এতসব জানাশোনাকে ঠিকমতো কাজে লাগানোর চাপও তাদের ওপরই থাকবে।’

এরই মধ্যে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা ভারতের সুবিধাটা হলো, তারা জানে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ যারাই হোক, ম্যাচটা দুবাইয়েই হবে। কিন্তু ‘বি’ গ্রুপ থেকে সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা আফগানিস্তানের মধ্যে যে দুই দল সেমিফাইনালে উঠবে, তারা এখনো জানে না তাদের কি দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেই ম্যাচ পড়বে নাকি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে।

সাউথ আফ্রিকা আগামী শনিবার করাচিতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নামবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পণ্ড হতে দেখা সাউথ আফ্রিকা প্রথম দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পেয়েছে। শুক্রবার আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতলেই সাউথ আফ্রিকারও সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু সাউথ আফ্রিকা গ্রুপে প্রথম হবে নাকি দ্বিতীয়, সেটা বোঝা যাবে শনিবার সাউথ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড ম্যাচের পরই।

তবে তাতেও সেমিফাইনালের লাইনআপ তো শনিবারেও চূড়ান্ত হবে না! কারণ, টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, এক গ্রুপের শীর্ষ দল খেলবে অন্য গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে সেমিফাইনালে ওঠা দলের সঙ্গে। ‘গ্রুপ বি’-র হিসাব-নিকাশ শনিবারই চূড়ান্ত হয়ে গেলেও ‘গ্রুপ-এ’ থেকে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যে কারা শীর্ষ দল হিসেবে আর কারা গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে যাবে, সেটা নিশ্চিত হবে রোববার ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর।

এত অজানার মধ্যেও সেমিফাইনাল দুবাইয়ে হলে তাঁদের জন্য ভালো হবে নাকি লাহোরে – এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ফন ডার ডুসেনকে। তাঁর বিশ্লেষণ, ‘ব্যক্তিগতভাবে বললে, আমি বলব লাহোরেই খেলতে চাইব। কারণ এখানে ব্যাটিং করতে ভালো লাগে। দুবাইয়ের পিচ লাহোরের মতো হাই-স্কোরিং না। তবে, না, আমার মনে হয় না এটা খুব বড় ব্যাপার।’

তাহলে লাহোর কেন তাঁর পছন্দের তালিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে, সে উত্তরেও প্রকারান্তরে ভারতের বাড়তি সুবিধার দিকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ‘লজিস্টিক্যালি লাহোরে খেলাই সুবিধাজনক হবে। সে ক্ষেত্রে একটা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না, দুবাইয়ে যেতে হবে না, যেটা কিনা আরেকটা দেশে। আমরা এখন যেখানে আছি, সেখান থেকে লাহোর খুব দূরে নয়, অর্থাৎ কন্ডিশনও কাছাকাছিই হবে। ব্যাপারগুলো এমনই তো, আমরা শনিবার সন্ধ্যার আগে কিছুই জানতে পারছি না।’

সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে পাকিস্তানে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ও ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলেছে, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাটিই তাদের চেনা। তবে উত্তরের শেষে এসে ফন ডার ডুসেন কূটনৈতিক উত্তর ঠিক রাখলেন, ‘দল হিসেবে বললে, কন্ডিশনের বিচারে সামনে যা-ই আসুক, সেটা মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের দলের আছে। আমাদের জন্য কোনো জায়গাতেই (দুবাই বা লাহোর) বেশি ভালো বা খারাপের কিছু নেই।’

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post