বিশ্বনবীকে অবমাননার দায়ে ইরানে পপ সিঙ্গারের মৃত্যু*দণ্ড
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে অবমাননা করার অভিযোগে ইরানে একটি আদালত পপ গায়ক আমির হোসেইন মাগসুদলু, যিনি তাতালু নামে পরিচিত, তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইরানি পত্রিকা এতেমাদের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির আপত্তি মেনে নিয়েছে এবং ব্লাসফেমির (ধর্ম অবমাননা) মামলায় আগে দেওয়া পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করেছে।’পত্রিকাটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরায় চালু করা হয় এবং এবার আসামিকে নবী (সা.)এর অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।তেহরানের প্রথম ফৌজদারি আদালত তাতালুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তবে এই রায় এখনো চূড়ান্ত নয় এবং এটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে ইরানি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে, তাতালুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার খবর দেশটির বিচার বিভাগ অস্বীকার করেছে। বিচার বিভাগের জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, এখনো কোনো চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুনঃ পরিচয় মিলেছে ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থীর
তবে দ্য ইনডিপেনডেন্ট এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তাতালু ইরানের আন্ডারগ্রাউন্ড সংগীতশিল্পী। এর আগে, তিনি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ছিলেন। পরে তাঁকে ইরানে প্রত্যর্পণ করা হয় এবং তখন থেকেই তিনি আটক।
র্যাপ, পপ ও আরঅ্যান্ডবি মিশ্র সংগীতের জন্য পরিচিত তাতালু এর আগে ‘বেশ্যাবৃত্তি’ প্রচারের অভিযোগে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ও ‘অশ্লীল বিষয়বস্তু’ প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে বিতর্কিত ইমেজ থাকার পরও তিনি একসময় রক্ষণশীল ইরানি রাজনীতিকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমনকি ২০১৭ সালে ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও অংশ নেন।
আরও পড়ুনঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত
এ ছাড়া, তিনি ২০১৫ সালে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সমর্থন করে একটি গান প্রকাশ করেন। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কর্মসূচিটি বাধার মুখে পড়ে।
এই রায়ের খবর এমন একসময় এসেছে, যখন শনিবার তেহরানে ইরানের সুপ্রিম কোর্টে দুজন বিচারক আলি রাজিনি ও মোহাম্মদ মোগিসেহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিচার বিভাগের সংবাদমাধ্যম মিজান অনলাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এ ঘটনায় হামলাকারী ‘একজন সন্ত্রাসী’। আক্রমণকারী বিচারকদের কক্ষে ঢুকে গুলি চালায় এবং পরে নিজেও আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় আরেকজন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ঢাকার দোহারে দোকানে চা খাওয়ার সময় প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে ইরানে ৯০১ জনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এক সপ্তাহে প্রায় ৪০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এ তথ্য জানিয়েছেন। তুর্ক বলেন, ‘ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে, যা গভীর উদ্বেগজনক। এখনই সময় এসেছে এই মৃত্যুর বন্যা থামানোর।’
Post a Comment