অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন্তব্য, জবাব দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন্তব্য, জবাব দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ের মন্তব্যের পালটা জবাব দিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।এবার এবিষয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে’।
শুক্রবার বিবিসি বাংলাকে নাহিদ বলেন, তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বেরিয়ে যাবেন।গত বুধবার বিবিসি বাংলাকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া এক বক্তব্য নিয়ে টানাপোড়েনের সূত্রপাত হয়। বিশেষত ‘বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে’ এবং শিক্ষার্থীরা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে ‘বেরিয়ে আসা উচিত’- বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত হিসেবে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘১/১১ এবং মাইনাস টু-এর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।’
অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে বক্তব্য নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন।
এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে তার ভাষায়, দেশি-বিদেশি চক্রান্তের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গেও সাদৃশ্য দেখছেন তিনি।
নাহিদ বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ‘সে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছে যে এটি অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, এর আন্ডারে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। সো একই টোনে আমরা যখন কথা বলতে দেখছি, এটা কিন্তু একটা সন্দেহের তৈরি করে।’আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে শুক্রবারে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার হিসেবে উল্লেখ করে এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না এবং পরবর্তী নির্বাচন ‘একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে’ আরাফাতকে উদ্ধৃত করে পোস্ট দেওয়া হয়।
নাহিদ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এটা তারা (বিএনপি) ওই উদ্দেশ্য থেকে বলেছে, কিন্তু তাদের কথার টোনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই টোনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’
অন্যদিকে শুক্রবার দলীয় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপিকে ওয়ান ইলেভেনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বিএনপি ওয়ান ইলেভেন আনার পাঁয়তারা করছে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি উল্লেখ করেন ‘১/১১তে যে ভয়াবহ পরিণতি তা বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করে নাই। বিএনপির নেতাকর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে খালেদা জিয়া পর্যন্ত সবাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।’
অনেক দল, অনেক ব্যক্তি টেলিভিশনে কথাবার্তা দেখে ‘মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর! বিএনপি কি আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে’ মন্তব্য করেন আব্বাস।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের দোসর ওই আওয়ামী লীগ, তাদের দিকে বিএনপিকে যারা ঠেলে দিতে চায়, আমি বলব তারা নিজের চেহারাটা আয়না দিয়ে দেখুন। নিজের অন্তরটাকে আয়না দিয়ে দেখুন, দেশবাসীকে আজকে ফাঁকি দেওেয়ার চেষ্টা করবেন না।’
গত দেড় দশকে দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সবাই নিপীড়িত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান? আমাদেরকে ভারতের দালাল বানাতে চান? এই কথা কখনও চিন্তা করবেন না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাজারমূল্যের দিকে সরকারের দৃষ্টি না দেওয়া বা প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে তার জন্য কি কোনো সমালোচনা করা যাবে না? তাহলে কীসের ভয় দেখান যে ১/১১-র পুনরাবৃত্তি হবে?
Post a Comment