বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেয়নি ছাত্রদল, অধিকার পরিষদসহ বামপন্থী সংগঠনগুলো
সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট, ছাত্র প্রতিনিধিত্বে একচেটিয়া উপস্থিতিসহ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেনবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন শেষে সকল ছাত্র সংগঠনের দ্বিতীয় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি সংগঠন অংশগ্রহণ করেনি।সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট, ছাত্র প্রতিনিধিত্বে একচেটিয়া উপস্থিতিসহ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেন।
তবে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ এই সভায় অংশগ্রহণ করেছেন।
গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা পালনকারী ছাত্র সংগঠন সমূহের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সকল ছাত্র সংগঠনের ঐক্যমতে জাতীয় সংকট রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।”এর আগে, গত ২৫ নভেম্বর ১৯টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩টি উদ্দেশ্যে জরুরি সভা করে— যেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করে। তবে দ্বিতীয় সভায় ওই ১৯টি সংগঠনের ৫টি অংশগ্রহণ করেনি। অন্যদিকে, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এই সভা থেকে শুরু থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “গতকাল আমরা দেখলাম গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতোদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন, অথচ সেখানে শুধুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।”
আরও পড়ুনঃ জুলাই বিপ্লবে শহীদদের জীবনী থাকবে পাঠ্যবইয়ে, লিপিবদ্ধ হবে ইতিহাস
তিনি বলেন, “এছাড়া বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জেলা প্রশাসনে ছাত্র প্রতিনিধি নামে শুধুই এক প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে। নাম দিচ্ছে ছাত্র প্রতিনিধি, অথচ অন্যদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। বিভাজন তৈরি হচ্ছে।”
“জুলাই-আগস্টের ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) বাংলাদেশ গঠনের যে প্রত্যয়, সেটার সাথে এসব ঘটনা সাংঘর্ষিক। সেজন্য আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই সভা থেকে বিরত থাকছি,” যোগ করেন তিনি।
নাসির আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রকল্প, শহীদদেরকে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সবক্ষেত্রে দেখেছি, কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্যকোনো সংগঠনের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনাও করা হয়নি।”
“গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনার নামে কেবল কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে আলোচনা করেছেন। এতে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন একটি পক্ষের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ছাত্রদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।”
“আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, যে সংগঠনগুলো যাচ্ছে তারা কেন যাচ্ছে, আবার যারা যাচ্ছেনা তারা কী কারণে বিরত থাকছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব,” যোগ করেন নাসির।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব হাসান ইনাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আহ্বায়িত প্রথম সর্বদলীয় মিটিংয়ে আমরা অংশ নিয়েছি। একইসাথে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহেও অংশ নিই। জাতীয় ঐক্যের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আমরা সাড়া দিচ্ছি। কিন্তু তারা মুখে মুখে সর্বদলীয় ঐক্যের কথা বললেও, সেই আস্থা রাখার মতো দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখা যাচ্ছেনা।”
Post a Comment