সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন: এবার বেরিয়ে আসছে যেসকল দুর্বলতার তথ্য

 সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন: এবার বেরিয়ে আসছে যেসকল দুর্বলতার তথ্য



পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গেট পাশ ছাড়া ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে না দেওয়া, অটোমেটিক ইলেকট্রিক গেট চালু করা, পর্যটন কর্তৃপক্ষের রেস্টুরেন্ট রেখে সাধারণ হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করা এবং সচিবালয়ের নিজস্ব পুলিশ ইউনিট গঠনসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।


যত্রতত্র দোকান

সচিবালয়ের অভ্যন্তরে একাধিক জায়গায় পান-সিগারেটের দোকান দেখা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ পুলিশের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এসব দোকান স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজনৈতিক তদবিরে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে নামকাওয়াস্তে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে না।ভয়াবহ আগুন লাগার পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বেরিয়ে আসছে নানা দুর্বলতার তথ্য। আছে পদে পদে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও।


সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন দায়িত্বরত পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। চলতি বছরের প্রথমদিকেও পুলিশের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি।সূত্র জানায়, সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার, তদবির এমনকি সুবিধাজনক অফিস কক্ষের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়েও দলাদলি আছে। চেয়ারে বসেই প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের অনেকে ইচ্ছেমতো অফিস ডেকোরেশন করিয়ে নেন। এদের কেউ কেউ আরাম-আয়েশের জন্য যথেচ্ছ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, গরম পানির গিজার ও রুম হিটার স্থাপন করেন। এতে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে। এগুলো অগ্নিকাণ্ডের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচিবালয়ের একাধিক ভবন অনেক পুরোনো। এমনকি বড় ধরনের ভূমিকম্প সহনশীল নয় বলেও বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দিয়েছেন। অপরদিকে বৈদ্যুতিক লাইনগুলো অনেক ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন করা হয়নি।


এ কারণে সচিবালয়ে নিয়মিত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়। ছোটখাটো আগুনের ঘটনাও ঘটে। এ জন্য পুরোনো বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। কিন্তু এসব নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। সচিবালয়ে কর্মরত বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনেরও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি রয়েছে। এমনকি তাদের কেউ কেউ মূল দায়িত্ব ফেলে নানা ধরনের তদ্বিরে নিয়োজিত।


বছরজুড়ে চলে নির্মাণকাজ

সচিবালয়ের ভেতরে বছরজুড়েই নির্মাণকাজ চলে। বর্তমানে অন্তত ৩টি জায়গায় নির্মাণযজ্ঞ চলছে। ফলে নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়াসহ সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নিত্যদিনের। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার থেকে শুরু করে নির্মাণকর্মীদের অনেকে যথাযথ পাশ ছাড়াই কেবল মৌখিক অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।


সচিবালয়ের এমন দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সচিবালয় হচ্ছে বিশেষ গুরুতপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই (কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এলাকা। অথচ আমি অবাক হয়েছি সেখানে কোনো স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কার্যকর নেই। একটি ভবনে আগুন লেগে ১০ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকল। সচিবালয় হচ্ছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়। যেখান থেকে আইন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু সেখানকার অবস্থাই যদি এমন হয় তাহলে অন্যদেরকে কীভাবে জবাবদিহিতায় আনবেন।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবিলম্বে সেখানকার প্রতিটি ভবনে অগ্নি ঝুঁকি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তাদের কয়েকজনকে এখনই বরখাস্ত করতে হবে। তা না হলে দায় নেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হবে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post