শেখ হাসিনার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত

 শেখ হাসিনার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত



ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় চার মাস পর বিদেশের বিভিন্ন স্থানে জনসমক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে আরও একটি অনুষ্ঠানে টেলিফোনে অংশ নেবেন তিনি।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী।


এর আগে ইউরোপের দুটি দেশে একইভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। আর এসব বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনা ‘রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন’ বলে মনে করছে বিএনপি।


মূলত গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেগুলো সত্যিই তার কথোপকথন কি না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে সেই রেকর্ডগুলোতে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নানা ধরনের রাজনৈতিক নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে তাকে।

তবে ওই সব ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড বাদ দিলে শেখ হাসিনা এবারই জনসমক্ষে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। তাই এসব বক্তব্যের মানে কি এই যে শেখ হাসিনা আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, এমন প্রশ্নই উঠেছে।বিরতি ভাঙছেন শেখ হাসিনা?

বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে বর্তমানে যে ধরনের টানাপোড়েনমূলক সম্পর্ক চলছে, এর মাঝে হঠাৎ শেখ হাসিনার সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টিতে অনেকেই মনে করছেন যে শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে।


যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনীতিতে আছে। তার নতুন করে ফিরে আসার তো কিছু নাই।’


নিউইয়র্কে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে যেসব দাবি করেছেন, সেসবের অন্যতম ছিল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে এবং তিনি ও তার বোন শেখ রেহানাকে খুন করার চক্রান্ত করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা যা যা বলছেন, তা দেশের স্বার্থে বলছেন উল্লেখ করে খালিদ চৌধুরী বলেন, দেশ এখন দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে। দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ আওয়ামী লীগ এই দেশের সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত।


এদিকে বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। যদিও চলতি বছরের আগস্টে সেই আদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।


যদিও শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের বিষয়ে আদেশের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ চৌধুরী বলেন, এটি ‘বাকস্বাধীনতা হরণ’। জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে আসছে।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সব রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার দাবি করা হলেও লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করছেন, শেখ হাসিনা বা তার দলের লোকেরা কে কী করছেন না করছেন, এই পুরো বিষয়টা একটি খেলার অংশ। এগুলো সব ফাঁকা আওয়াজ।


তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শেখ হাসিনার বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনা যেখানে যা-ই বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিদ্বেষমূলক কথাবার্তাই বলছেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন।


সালাউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post